শীতকাল অনেকের কাছে প্রিয় ঋতু, আবার অনেকের কাছে স্রেফ আতংক। আতংকের কারণ একটাই- ঠান্ডা পানি। শীতের কাঁপুনি তো আছেই, তার সাথে যোগ হয় যখন গোসল করার প্রসঙ্গ আসে। সম্ভাব্য সবরকম উপায়ে পানির স্পর্শ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে চলেন এই ধরনের আতঙ্কিত মানুষরা। দিনের পর দিন পার করে দেন তারা গোসল না করে। যা পরবর্তীতে নানারকম পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা তৈরি করে। সমস্যা থেকে বাঁচতে তখন গরম পানির সাহায্য নিতে হয়।
কিন্তু সময়সময় পানি গরম করার জন্য যে আপনার চুলায় গ্যাস থাকবে- তার কোনো গ্যারান্টি নাই। আবার পানি গরম করার মতো সময়ও থাকে না অনেকের, বিশেষ করে তাড়াহুড়ো করে বেরানোর সময়। কেউ কেউ তখন অত্যন্ত সাহসী হয়ে ঠান্ডা পানিতেই গোসল করে ফেলেন। কিন্তু দিনের পর দিন ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে নানান অসুখ হতে পারে। এই ধরনের সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে একটাই- ইলেকট্রিক গিজার। গিজারের সাহায্যে খুব সহজেই আপনি পানি গরম করে নিতে পারবেন চটজলদি। আমাদের আজকের আর্টিকেলে এই উপকারি ডিভাইসটির আদ্যোপান্ত নিয়ে আলাপ করবো।
গিজার কি?
ইংরেজি শব্দ Geyser এর বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে উষ্ণপ্রস্রবণ পানি যেটা থেকে মাঝে মাঝে জল বা বাষ্প স্তম্ভে উঠে আসে। সহজভাবে বললে গিজার হচ্ছে পানি গরম করার যন্ত্র। এটি সাধারণত গোসলখানা বা বাথরুম এ লাগানো হয় এবং বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের সাথে সংযুক্ত থাকে । গিজার মূলত পানি গরম করার কাজে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত বাথরুমে এটি লাগানো হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ এবং পানির লাইনের সঙ্গে কানেক্ট করা এ মেশিনের সুইচ চাপ দিলেই গোসলের জন্য গরম পানি পেয়ে যাবেন আপনি। শীতে অনেকেই আছে যারা নিয়মিত গোসল করেন না।
গিজার কেন কিনবেন?
- শীতকালে ঝটপট গরম পানি পেতে
- পানি গরম করতে যে পরিমাণ গ্যাস খরচ হয় সেই তুলনায় সাশ্রয়ী
- ঝামেলাবিহীন ও নিরাপদ
- গ্যাসের চুলার তুলনায় অধিক সময় সাশ্রয়ী
- দীর্ঘস্থায়ী
- সহজে ইনস্টল করা যায়
- কার্বন মনোক্সাইড নিঃস্বরণ হয় না, ফলে এটি পরিবেশবান্ধব
গিজার কেনার আগে
- অনেকেই গিজার কেনার আগে দ্বিধায় ভোগেন। গিজার কেনার আগে কিছু জিনিস মাথায় রাখলে সমস্যা হবে না। যেমন:
- গিজারে অটোকাট-অফ, কপার হিটিং এলিমেন্ট, থার্মাল কাটআউট, টু ইন ওয়ান প্রেশার কাম রিলিজ ভাল্ব আছে কিনা- সেসব খেয়াল রাখবেন।
- গিজার কেনার আগে আপনার চাহিদা নির্ধারণ করে নিতে হবে। সাধারণত চারজনের পরিবারের জন্য ২৫ বা ৩৫ লিটারের গিজার হলে চলে যায়। তাই পরিবারের সদস্যদের কথা মাথায় রেখে গিজার নির্ধারণ করুন।
- যে ব্রান্ডের গিজার কিনতে চাচ্ছেন সেটা সাধারণত কত বছর ব্যবহার করা যাবে, সেই সম্পর্কে আগে জেনে নিতে হবে। একই সাথে গিজারের কোনো পার্টস নষ্ট হয়ে গেলে সেটা বাজারে সহজলভ্য কিনা সেটাও খোঁজ নিয়ে নেবেন।
- কোন গিজারে কতটুকু বিদ্যুতের ব্যবহার হয়- সেটা কেনার পূর্বে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
- গিজারের ওয়ারেন্টি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই ওয়ারেন্টি সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে গিজার কেনা উচিত নয়।
গিজারের রক্ষণাবেক্ষণ টিপস
- নতুন গিজার লাগানোর সময় বৈদ্যুতিক সংযোগ ঠিকমতো পেয়েছে কিনা সেটা দেখে নিন। এর পাশাপশি পাইপের কানেকশনও ঠিক লাগানো হয়েছ কিনা সেটাও দেখে নেবেন। আয়রনের পাইপ হলে সেটা অনেক বেশি ভাল হয়।
- গিজার নিজের মতোই চলে। কারেন্টের সুইচ দেয়ার পর পানি গরম হয়ে গেলে তা একা একাই বন্ধ হয়ে যায়। আপনার গিজারটি সেইমতো কাজ করছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখুন।
- পানি গরম হয়ে যাওয়ার পর গিজারটি বন্ধ রাখুন। এতে যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, তেমনই দীর্ঘদিন যন্ত্রটি ভাল থাকবে।
- পানি গরম হয়ে গেল গিজার থেকে পুরো পানিটা বের করে নিন। পানি ভেতরে জমে থাকলে গিজারে আয়রন জমে যায়। ফলে গিজারটি খুব তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই এই ব্যাপারে খুব সাবধান থাকতে হবে।
- গিজারে কোনও সমস্যা দেখলে তা দ্রুত এক্সপার্ট ডেকে ঠিক করার ব্যবস্থা করুন।
গিজার রক্ষণাবেক্ষণের আরো উপায়
- গিজার কিনে অনেকেই মাসের পর মাস ব্যবহার না করে ফেলে রাখেন। এমন ভুল করা যাবে না। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করলে গিজারের ভেতরে আয়রনের আস্তরণ বাড়তে থাকে। যে অঞ্চলে পানিতে এমনিতেই আয়রনের পরিমাণ বেশি, সেখানে অবস্থা আরও খারাপ হয়। আয়রন গিজারের সেন্সর খারাপ করে দেয়। তাতে অটো-কাট নষ্ট হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে তার সেফটি ভাল্বকে। ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। কারণ, জলীয়বাষ্প বেরোতে না পেরে প্রবল চাপে গিজার ফেটে আগুন ধরে যেতে পারে! তাই প্রয়োজন না থাকলেও কিছুদিন পর পর গিজার ব্যবহার করতে হবে।
- শীতের শুরুতে গিজার ব্যবহার শুরুর আগে এক্সপার্ট ডেকে একবার দেখিয়ে নিন। গিজার নির্দিষ্ট সময় পরপর সার্ভিসিং করতে হয়। দেখে নিতে হবে সেন্সর ঠিক আছে কিনা। সেফটি ভাল্ব বছরে অন্তত একবার অভিজ্ঞ এক্সপার্ট ডেকে পরীক্ষা করাতে হবে।
- একবার গিজার চালিয়ে অনেকে বন্ধ করতে ভুলে যান। এই ব্যপারে অত্যন্ত সাবধান থাকতে হবে।
গিজারের নানা উপকারিতা সম্পর্কে তো জানলেন। তবে এইসব উপকারিতা শুধু নিজের জন্যই না, আপনার প্রিয় মানুষগুলোর জন্যও শীতকালে একটি ভালো গিজার হতে পারে আশীর্বাদের মতো। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কমানুষদের জন্য গিজার খুবই প্রয়োজনীয় একটা যন্ত্র। দেখা যায়, মাঝরাতে আপনার ছোট্ট বাবুটাকে হুটহাট গোসল করানোর দরকার হয়। অথবা আপনার বয়স্ক বাবা-মা, দাদা-দাদী বা নানা-নানুর যদি ভোরে উঠে নামাজ পড়ার অভ্যাস থাকে।