ঢাকা গেট (Dhaka Gate) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এলাকায় অবস্থিত একটি মুঘল স্থাপত্য নিদর্শন। ঢাকা গেটের ঐতিহাসিক নাম মীর জুমলা গেট কারণ তিনিই ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ঢাকার সীমানা রক্ষা এবং বাইরের শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই গেটটি তৈরি করেছিলেন।
ঢাকা গেট কোথায় অবস্থিত?
মুঘল আমলে এই ঢাকা গেট ছিল বুড়িগঙ্গা নদীর মধ্য দিয়ে ঢাকায় প্রবেশের পথ। তখন এটি মীর জুমলা গেট নামে পরিচিত ছিল। পরে এটি কখনো ময়মনসিংহ গেট, কখনো ঢাকা গেট আবার কখনো রমনা গেট নামে পরিচিত হয়। এই গেটটি রমনায় প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত হওয়ায় পরবর্তীতে সাধারণ মানুষের কাছে এটি রমনা গেট নামে পরিচিতি লাভ করে। যাইহোক, বাংলাদেশ সরকারী গেজেট অনুসারে, এই খিলান এবং এর আশপাশকে “মীর জুমলার গেট” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কার্জন হল পেরিয়ে বাংলা একাডেমি যাওয়ার পথে হলুদ রঙের মীর জুমলা গেট বা তোরণ চোখে পড়বে। এই গেটের তিনটি অংশের একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের মুখোমুখি, কেন্দ্রীয় অংশটি সড়ক বিভাজকের মধ্যে পড়ে এবং অন্য অংশটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুখোমুখি যা তিন নেতার সমাধির পাশে অবস্থিত।
“মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে মীর জুমলাকে বাংলার সুবেদার হিসেবে পাঠানো হয়। ঢাকাকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তিনি এই গেটটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ ইঞ্চি ব্যাসের এই স্তম্ভগুলি খুব বিরল। যার উপরে খোদাই করা চতুর্ভুজ বিশিষ্ট একটি চালা রয়েছে। পশ্চিম পাশে বড় স্তম্ভের পাশে আরেকটি অপেক্ষাকৃত ছোট স্তম্ভ। যার মাঝে একটি প্রাচীর রয়েছে। প্রাচীরটি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রায় ২০ সেন্টিমিটার চওড়া। কিন্তু পূর্ব দিকে বড় স্তম্ভের সাথে প্রাচীর বা প্রাচীর থাকলেও ছোট স্তম্ভ নেই। ব্রিটিশ শাসনামলে, চার্লস ডয়ের ঢাকা গেট ১৮২৫ সালে একবার সংস্কার করা হয়েছিল। এটি ২০২৩ সালে আবার সংস্কার করা হয়েছিল এবং ২৩ জানুয়ারী, ২০২৪-এ দর্শনার্থীদের জন্য আবার খুলে দেওয়া হয়েছিল।”
৪০০ বছরের পুরনো ঢাকা শহরে ‘ঢাকা গেট’ শহরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে। পর্যটক, বিদেশী, নগরবাসী এবং নতুন প্রজন্ম যখন শহরে প্রবেশ করে তখন তারা শহরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চায় এবং এই ঢাকা গেট সেই তৃষ্ণা কিছুটা হলেও মেটাবে।
ঢাকা গেইট এর নির্মাতা কে?
‘ঢাকা গেইট” এর নির্মাতা হলেন ‘মীর জুমলা’, আমলে তখন আওরঙ্গজেবের শাসন। “আওরঙ্গজেব বাংলার সুবেদার করে পাঠান মীর জুমলাকে, “যিনি ছিলেন একজন ইরানি তেল ব্যবসায়ীর ছেলে। বাংলার সুবেদার হওয়ার পরে তিনি এই গেট নির্মাণ করেন নগর নিরাপত্তা ব্যূহ হিসেবে।
তৎকালীন বাংলার রাজধানী ঢাকা প্রায়ই বহিরাগত দস্যু দ্বারা আক্রান্ত হতো। (১৬৬০ সালে মূলত মগ দস্যুদের থেকে ঢাকাকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ঢাকার উত্তর দিকে এই গেট নির্মাণ করেন। সেই সময় মীর জুমলা গেটসংলগ্ন এলাকায়। একটি নয়নাভিরাম বাগান গড়ে তোলেন, যার নাম ছিল রাগ – ই – বাদশাহি বা সম্রাটের বাগান।
এক নজরে ঢাকা জেলা
জেনে নিই
- মনে করা হয়- বল্লাল সেন কর্তৃক নির্মিত ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে এর নামকরণ করা হয়- ঢাকা।
- পুরাতন নাম-ঢাবেক্কা, ঢাক্কা, জাহাঙ্গীরনগর।
- ঢাকা বাংলার রাজধানী হয়েছে মোট ৫ বার।
- প্রথম: ১৬১০ সালে সুবেদার ইসলাম খাঁ কর্তৃক।
- দ্বিতীয়: ১৬৬০ সালে মীর জুমলা রাজমহল থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
- তৃতীয়: ১৯০৫ বঙ্গঙ্গের সময়- লর্ড কার্জন কর্তৃক।
- চতুর্থ: ১৯৪৭ সাল : ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির সময়।
- পঞ্চম: ১৯৭১ সাল: স্বাধীনতা যুদ্ধের পর। স্বাধীনতার পূর্বে ঢাকা রাজধানী ছিল- ৪ বার।
- ১৮৬৪ সালে ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বাকল্যান্ড বাঁধ দেওয়া হয়।
- ১৯০১ সালে ঢাকায় সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক বাতি চালু হয়। (আহসান মঞ্জিলে) ।
- প্রাক মুঘল আমলের নির্মিত ঢাকার সর্বপ্রাচীন মসজিদ-বিনত বিবির মসজিদ।
- গুরুদুয়ারা নামক শাহী মন্দির- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাংলাদেশে শিখদের একমাত্র মন্দির)।
- নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট- ঢাকার সেগুন বাগিচায়।
- আফগান দুর্গ- ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। সামরিক যাদুঘর- মিরপুর।
- ঢাকা শহরের গ্যাস সরবরাহ করা হয়- তিতাস গ্যাস ক্ষেত্র থেকে।
- SPARRSO-Spacer Research and Remote Sensing Organization প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ঢাকার আগারগাও এ অবস্থিত।
- ICDDRB, IJSG, CIRDAP-এর সদর দপ্তর ঢাকায়।
- BAEC-Bangladesh Atomic Energy Commission এর সদর দপ্তর বাংলা একাডেমি, ঢাকা
- সার্ক কৃষি তথ্য কেন্দ্র (SAIC) কোথায় অবস্থিত-ফার্মাগেট, ঢাকা। (প্রতিষ্ঠা-১৯৮৯)।
- বাংলাদেশের বেতারের সদর দপ্তর ঢাকার আগারগাঁও (১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন)।
- ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র- ঢাকা প্রকাশ (১৮৬১ সালে প্রকাশিত হয়)।
- বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সদর দপ্তর- পুরানা পল্টন, ঢাকা ।
- বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব : নবাব আব্দুল গনি, খাজা আহসান উল্লাহ, নবাব সলিমুল্লাহ