চুল ঘন করার উপায়

চুল ঘন করার উপায়

দিনের পর দিন চুল পাতলা হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু এটা সবার জন্যই খুব বেদনাদায়ক। অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, পুষ্টির ঘাটতি, এলার্জি, হরমোন ভারসাম্য, ঠিকমতো চুলের যত্ন না নেয়া এবং জেনেটিক কারণে চুল পড়তে পারে। চুল পড়া কমানোর জন্য এবং পাতলা চুল ঘন করা যায় খুবই সহজলভ্য উপাদান আপনি ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো সবসময় হাতের কাছেই পাওয়া যায় তাই আপনি যখন খুশি ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে চলুন প্রাকৃতিক উপাদান দেখে নেওয়া যাক যেগুলো পাতলা চুল ঘন করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী।

পাতলা চুল ঘন করার উপায়

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী

পাতলা চুল ঘন করা যায় ঘৃতকুমারীর সঠিক ব্যবহার করার মাধ্যমে। এর জন্য একটি অ্যালোভেরা পাতা থেকে চামচ বা ছুড়ির সাহায্যে এর জেলটি বের করে নিন। জেল-টাকে মসৃণভাবে পেস্ট করে নিন। এবার মাথার স্ক্যাপ্ল-এ ভালো করে ঘষে ঘষে লাগিয়ে রাখুন প্রায় ১০-১৫ মিনিট। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতি সপ্তাহে ২ বার ইউজ করতে পারেন। অ্যালোভেরা স্ক্যাপ্ল-এর মৃত কোষ মেরামত করে চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি চুলে ভলিউম এনে দেয়। পাতা থেকে জেল সংগ্রহ করার সুযোগ না থাকলে অ্যালোভেরা জেল কিনে নিতে পারেন।

ডিম

একটি বাটিতে একটি ডিম ভেঙে নিন। এবার এর সাথে যোগ করুন ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল। এই দুটি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন। এবার একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন ৩০-৪০ মিনিটের জন্য। তারপর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার দিয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করুন। ডিমে আছে প্রোটিন এবং সালফার যা চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে এবং চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করার পাশাপাশি চুলকে করে তোলে ঝলমলে ও সিল্কি। আর ডিমের সাথে থাকা অলিভ অয়েলও চুল ঘন ও সিল্কি করতে বিশেষভাবে কার্যকরী।

আমলকী

১ টেবিল চামচ আমলকী গুঁড়ার সাথে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এতে টকদই মিশিয়ে নিলে সেটা চুলের জন্য আরও বেনিফিসিয়াল হবে। চুল ড্রাই ও ড্যামেজ হলে মধুও অ্যাড করা যেতে পারে। ভালোভাবে মিশ্রণ তৈরি করে এবার এটি চুলে লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু করে নিন এবং নরমাল পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন। মধু চুলে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে। আমলকীতে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস এবং ভিটামিন সি, যা চুলের স্বাস্থ্য সুন্দর রাখে এবং চুলের গোড়ায় কোলাজেন-এর মাত্রা বৃদ্ধি করে চুল বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। লেবুর রস চুলের খুশকি দূর করে এবং আমলকী গুঁড়ার সাথে যুক্ত হয়ে চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে।

মেথি

পাতলা চুল ঘন করা যায় মেথি ব্যবহারেও। কীভাবে? ২ টেবিল চামচ মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন ভিজিয়ে রাখা মেথি দানা ছেঁকে নিয়ে এর সাথে হাফ কাপ পরিষ্কার পানি যোগ করে ব্লেন্ডার-এ মসৃণভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এবার এই পেস্টটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে নিন। এটি সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করুন। চুলের স্বাস্থ্য বজায় রেখে চুলের বৃদ্ধির জন্য মেথি একটি শ্রেষ্ঠ উপকরণ। এটি স্ক্যাল্প-এর প্রদাহ দূর করে, খুশকি তাড়ায় এবং চুল মজবুত করে।

মেহেদি

পাতলা চুল ঘন করা যায় মেহেদির ছোঁয়াতে। কীভাবে? মেহেদি পাতা অল্প পানি দিয়ে বেটে নিন। আপনি চাইলে এর সাথে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল যোগ করতে পারেন। এবার এটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল আবৃত করে রাখুন ৩০-৩৫ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি মাসে ২/৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। মেহেদি চুলের আদর্শ খাদ্য। এটি চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এখন মার্কেটে হেনা প্যাক কিনতে পাওয়া যায়, তাই মেহেদি পাতা বাটাবাটির ঝামেলা এড়াতে সেটাও ইউজ করতে পারেন।

চুল পড়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্যকর না হওয়া। একটি হেলদি ডায়েট চুল পড়ার হার অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও ভিটামিন এবং মিনারেলস-এর ঘাটতি হলেও চুল পড়ে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি উপরের প্রাকৃতিক উপাদানগুলো আপনার চুলে নিয়মিত ব্যবহার করুন। নিয়মিত ব্যবহারে আপনার পাতলা চুল আগের চেয়ে ঘন এবং সুন্দর হবে।

ঘরোয়া উপায়

ঝলমলে, ঘন ও প্রাকৃতিক ঘন চুল পেতে চাইলে নিয়মিত যত্নের বিকল্প নেই। পাশাপাশি সুষম খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুমও জরুরি। জেনে নিন ঘন ও সুন্দর চুল পাওয়ার কিছু উপায় সম্পর্কে।

  • পেঁয়াজের রস সরাসরি লাগান চুলের গোড়ায়। চাইলে লেবুর রস বা নারকেল তেল মিশিয়েও লাগাতে পারেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সালফার ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • চাল ধোয়া পানি স্প্রে বোতলে নিয়ে রাখুন। চুলে স্প্রে কিছু এই পানি।
  • ডিমের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে চুলে লাগান। কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে।
  • ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ক্যাস্টর অয়েল ম্যাসাজ করুন চুলে।
  • মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। এরপর পেস্ট বানিয়ে চুলে লাগান।
  • সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার সালফার ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নেবেন।
  • খাদ্য তালিকায় রাখুন প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার।
  • চুলে তাপ প্রয়োগকারী যন্ত্র ব্যবহার না করার চেষ্টা করুন। এই ধরনের যন্ত্র চুল নষ্ট করে দেয়।
  • নিয়মিত চুল আঁচড়ান। এতে চুলের ফলিকল ভালো থাকে ও চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
  • চুলের জন্য দারুণ উপকারী অলিভ অয়েল। সামান্য গরম করে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন অলিভ অয়েল।